ধর্ষণের ভাইরাসে আক্রান্ত চারপাশ
ধর্ষণের ভাইরাসে আক্রান্ত চারপাশ
আহমদ আল হুসাইন
ধর্ষণ ভাইরাসে আক্রান্ত চারপাশ । দিল্লির ঘটনার পর থেকে একের পর এক এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেই চলেছে । দিল্লি , টাঙ্গাইলের পর এবার ঢাকার সাভারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ এবং তার ভিডিও চিত্র ধারণের ঘটনা ঘটেছে । চার বছরের নিষ্পাপ শিশুও ধর্ষকদের বিষাক্ত থাবা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না ।
টাঙ্গাইলে গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি কে দেখানো হয়েছিল প্রলোভন আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রানবন্ত প্রতিচ্ছবি । নাটকে অভিনয়ের প্রলোভন । দারুন একটা স্বপ্নের হাতছানি পেয়েছিল মেয়েটি । কিন্তু এই সর্বনাশা স্বপ্নের বিষাক্ত ইনজেকশনে যে তার জীবন মরণাপন্ন হতে পারে সে তা ভাবতেও পারেনি ।
নাটকে অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মধুপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেওয়া হয় মেয়েটিকে । এরপর চার ধর্ষকের অবানবিক আর পাশবিক চিত্রনাট্য পরিচালিত হয় শুক্রবার দিনভর । ধর্ষণে সহায়তা করে তার বান্ধবী বীথি আক্তার ওরফে ইভা ।
পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে । কিন্তু বর্তমানে পুরুষের পাশপাশি নারীরা ই আর নারীদের জন্য নিরাপদ নয় । নিজের বান্ধবীকে ধর্ষণে সে নিজেই সহায়তা করছে । এর চেয়ে অমানবিক আর কি ই বা হতে পারে !! মূল্যবোধের সূচক কোথায় নামলে এমনটি সম্ভব তা ভাবতেই শিহরিত হয় শরীরের প্রতিটি লোম । যেখানে সে তাকে বাঁচাবে , এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে , সোচ্চার ভুমিকা পালন করবে । অথচ সে নিজেই তার বান্ধবীর সর্বনাশ করছে ।
শুধু টাঙ্গাইলের এই ঘটনা ই নয় । । মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কলেজছাত্রীর এক বান্ধবী বেড়ানোর কথা বলে তাকে সাভার নিয়ে যায় । উচ্চস্বরে গান ছেড়ে দিয়ে একটি ফ্ল্যাটে কয়েকজন লম্পট তরুণ তাঁকে ধর্ষণ করে । এখানেও হায়েনার সামনে একটি মেয়ের সর্বনাশ ডেকে আনে আরেকটি মেয়ে । ধর্ষকরা পুরুষ, পশু, জানোয়ার । এই জঘন্য কাজ করতে তাদের একটু বেগ পেতে হয় । কিন্তু একজন নারী যদি তাদের সাহায্য করে তাহলে তারা খুব সহজেই তাদের পাশবিক রুপ টা ধারন করতে পারে । ঘটনা ঘটতে পারে খুব সহজেই । ধর্ষণের মত এই জঘন্য কাজে ধর্ষকদের সহায়তায় নারীর অংশগ্রহণ হতাশ এবং বিচলিত হওয়ার বিষয় । উদ্বেগের কারণ এটাই । এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটছে চারপাশে । ধর্ষণের সব ঘটনা ই মিডিয়াতে আসে না । লোকচক্ষুর ভয়ে , সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে কিংবা ধর্ষকদের হুমকির মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভিকটিমের পরিবার । ঘটনাকে সেখানেই দাফন দিতে বাধ্য হন তারা ।
‘’ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রমতি জয়ললিতা জয়ারামের প্রস্তাব মতো বাংলাদেশেও ধর্ষনকারীদের ইনজেকশন দিয়ে খোজা করে তারপর ইরানের মতো প্রকাশ্যে উলঙ্গ করে যৌনাঙ্গে আঘাতের পর আঘাত করে রক্তাক্ত শরীরে মুখের মধ্যে লোহার বিশাল বড়শি গেঁথে আগে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলানো, তারপর নির্মমভাবে পিটাতে পিটাতে মুমূর্ষু হলে এরপর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য নতুন আইনের প্রস্তাব করছি’’ । এই প্রস্তাবের সাথে একমত না হয়ে উপায় নাই । সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে , সমাজের কোষে কোষে রক্তে মেশা হিমোগ্লোবিনের মত ধর্ষণ নামের ভাইরাস মিশে গেছে । অস্ত্রপাচার আবশ্যক ।
ধর্ষিতার মা , ধর্ষিতার বাবা , ধর্ষিতার ভাই এমন আরও পরিচয়ের সাথে পরিচিত হতে হয় ভিকটিমের পরিবার কে । অথচ এই জঘন্য কাজের মূল হোতা ধর্ষকদের পরিবারের এমন পরিচিতি থাকে না সমাজে । ধর্ষকের বাবা , ধর্ষকের মা , ধর্ষকের ভাই সর্বোপরি ধর্ষক এবং তার পরিবারকে বাস্তব জীবনের প্রীতিটি কাজে হেয় পরিপন্ন করতে হবে । তাদের মুখে থুতু নিক্ষেপ করতে হবে । বিতারিত করতে হবে হবে সমাজ থেকে ।
অবিভাবকরা তাদের প্রানপ্রিয় মেয়েটিকে কোন ছেলে বন্ধুর সাথে কোথাও যেতে দেন না বা দিতে পারেনও না । দেওয়া উচিতও না । বিশ্বাস করে যখন কোন বান্ধবীর সাথে ছেড়ে দেন আর এই সুযোগে যদি নারীপশু বান্ধবী এমন কাজ করে তাহলে তা খুবই দুঃখজনক ।
এদেশের প্রধানমন্ত্রি একজন নারী , বিরোধীদলীয় নেত্রিও একজন নারী । অনেক নারী মন্ত্রীও আছেন । রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে নারীরা । এই লজ্জা আমার , আপনার , সবার , তাদেরও । একজন মেয়ে ধর্ষিত হলে দেশের সব নারী ই ধর্ষিত হয় । ধর্ষিত হয় আমার আপনার মা , বোন কন্যা ।একজন মেয়ে ধর্ষিত হলে পুরো দেশই ধর্ষিত হয় । তাই ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত এবং তা দ্রুত কার্যকর করা অত্যাবশ্যক ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন